Monday, June 29, 2020

"অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা " ৪র্থ পর্ব




জল চলে যাবার পর থেকেই অন্তুর মনটা অনেক ছটফট করছিল। সে যতোই চেষ্টা করছে মন কে শান্ত রাখার, পারছেনা। ওর বার বার এটাই মনে হচ্ছিল- এতো টা অপমান না করলেও হতো মেয়েটাকে। অন্তু ঢাকায় একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে মাস্টার্স পড়ছে, বাবা- মা অনেক আগেই মারা গেছে, গ্রামে থাকে পুরো পরিবার, পড়াশোনার জন্য অন্তু ঢাকায় থাকে, রান্নার জন্য ওর ছোট বোন তানহা থাকে সাথে। সে একবার ভাবলো, তানহাকে সব বলবে, আবার ভাবলো- না থাক, আপাতত কাউকেই কিছু বলবেনা.......কালকে জল আসলে ওকে বুঝিয়ে শান্ত করলেই অন্তুর মনের অবস্থা হয়তো পাল্টে যাবে। এসব সাত পাচ ভাবতে ভাবতে সে ঘরের বাতি অফ করে শুয়ে রইলল সে সচরাচর এতো আগে টিভির রুম থেকে উঠে না কিন্তু কেন জানি আজকে ওর টিভির প্রতি মন নেই, ছোট বোন তানহা একবার ডাকলেও অন্তু সাড়া না দিয়ে খাটে উপুর হয়ে শুয়ে রইল। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়ল টেরই পেলো না। হঠাৎ ঘুম ভাংল একটা স্পর্শ তে! প্রথমে বুঝতে পারেনি কে........চোখ কচলে একটু ভালো করে তাকাতেই দেখলো-জল সামনে দাঁড়িয়ে আছে!!! হঠাৎ সারপ্রাইজ বলতে যা বোঝায়, অন্তুর বেলায় ও তাই হলো......সে ভেবচা খেয়ে গেলো!

জল অন্তুর দিকে তাকিয়ে আছে আর দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটছে............মুখে কোন কথা নেই..............অন্তু ই প্রথমে নিরবতা ভেংগে প্রশ্ন করলোঃসব ছাত্রীদেরকে অন্তু সাধারণত 'আপনি' করেই ডাকে, জল কে ও আপনি করেই ডাকতে গিয়েও সামলে নিয়ে বললঃ

অন্তুঃ এই অসময়ে তুমি এখানে!

জল গলা পরিস্কার করার জন্য একটা ছোট্ট কাশি দিয়ে বললঃ
কেন, আসতে বারন আছে নাকি? না দেওয়ালে সাইনবোর্ড লাগানো আছে যে, পড়ার সময় ছাড়া আপনার বাসায় আসা যাবে না?
বাকা কথাটা অন্তুর তেমন সহ্য হয় না, এখনো হলো না। সে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলোঃ সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হইছ, তারমানে অন্য কোথাও যাচ্ছ আমার বাসার নাম করে? এসব কি?

জল আগেই বুঝতে পেরেছিল অন্তু ওর আসাটা তে যতোটা না অবাক হয়েছে তারচেয়ে বেশি সন্দেহ করেছে তাই ওর কথা শুনে হেসে বললঃ পাগল নাকি আপনি! আমি আপনার কাছেই আসছি! বাসায় যাওয়ার পর থেকে অনেক ভেবেছি, হয়ত আপনার কথাই ঠিক, আমার কোন যোগ্যতা নেই আপনার সাথে সম্পর্ক করার! হয়তোবা আমি ই একটু বেশি আশা করে ফেলেছিলাম, বুঝিনি আপনি ত আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে!
কথাগুলো বলতে বলতে জলের চোখ ভিজে উঠল, এই রুমের বাতি অফ ছিল কিন্তু পাশের রুমের আলোতে অন্তু স্পষ্ট দেখতে পেলো জলের চোখের কোনে পানি জমে আছে........সে মনে মনে দোয়া করতে লাগলো....... আল্লাহ ওর মন যেনো ঘুরে না যায়, আমিও ওকে ভালোবেসে ফেলেছি!! কিন্তু মনে ঝড় উঠলেও মুখে তা গোপন করার চিরাচরিত একটা স্বভাব অন্তুর ছেলেবেলা থেকেই আছে,তাই এখনো সেই কাজটা ই করল। মুখের ভাবে কোন পরিবর্তন আনলো না, সে শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল.......

জলঃ আমি আপনাকে ভুলে যাবো সিন্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম! কিন্তু বিশ্বাস করেন, এখান থেকে বাসায় যাওয়ার পর থেকে আমি একটা সেকেন্ডের জন্য ও আপনার চেহারাটা ভুলতে পারছিলাম না! আমার ভেতর টা আপনার জন্য জ্বলে যাচ্ছে! কথাগুলো বলতে বলতে জলের গলা ভারি হয়ে উঠল কান্নায়............
কিছুটা নিশ্বাস নিয়ে জল আবারও বলতে লাগলোঃ
ভালোবাসা কি তা আমি জানি না তবে আপনাকে দেখার পর কেন জানি খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে.......হয়তো আমি আপনাকে অল্প কয়েক দিন ধরে চিনি কিন্তু এই অল্প কয়েকটি দিন ই আমি বুঝতে পেরেছি হয়তোবা আপনি ই আমার জন্য পারফেক্ট.........

অন্তু কি বলবে ভেবে পেলো না! একটা মেয়ে যার বয়স মাত্র ১৬/১৭ হবে, সেই মেয়ের মুখ দিয়ে এমন কথা বের হবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি। এটা মুভির মতো লাগছে ওর কাছে তাই একগাল হেসে বললঃ
কতোদিন ধরে এই ডায়লগ মুখস্ত করেছ?

জলঃ আপনার যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন, আমি কোন মুভি দেখিনা, আর এসব সবগুলোই সত্যি কথা।

অন্তু হেসে বললঃ হুম বুঝলাম। আমার সাথে প্রেম করতে হলে তোমাকে ৩ টা শর্ত মানতে হবে। পারবা মানতে?

জল মনে মনে অনেক খুশি হলো কিন্তু মুখে প্রকাশ করলো না, বলল-- চেষ্টা করবো।আপনি বলেন শুনি কি কি শর্ত আপনার?

অন্তু এবার জল কে হাতে ধরে খাটে বসালো, জলের হাত দুটি নিজের হাতে নিয়ে বললঃ তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে আমি তোমাকে ই ভাবছিলাম, সত্যি তোমাকে হয়তোবা ভালোবেসে ফেলেছি!

অন্তুর কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে জল বললঃ বাসায় আম্মু কে বলে আসছি নন্দিনির কাছে বই নিতে আসছি, তাই এসব কালকে শুনবো, আপনি শুধু এটা বলেন এখন শর্ত ৩ টা কি কি?

অন্তু ঃ আচ্ছা তাহলে আমার প্রথম শর্ত হচ্ছে তুমি ঘর থেকে কোথাও বের হতে পারবে না, আমার পারমিশন ছাড়া, যদি মা নিয়ে যায় কোথাও যেতে পারবা, এ ছাড়া অন্য কারো সাথে কোথাও যেতে পারবে না।
২য় শর্ত হচ্ছে - তুমি কোন ছেলেদের সাথে কথা বলতে পারবে না, কোন জায়গায়, স্কুলেও না। আর ৩য় টা হচ্ছে, যদি কখনও কোথাও যেতে হয় বোরকা পরে, হিজাব পরে যেতে হবে। পারবা মানতে?

জল খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলি শুনছিল, অন্তুর কথা শেষ হতেই বললঃ যদিও শর্তগুলো অনেক কঠিন আর অঅদ্ভুত তবু আমি আপনার জন্য সবগুলি ই মানবো কারন আপনি আমার জন্য আমার পৃথিবী। কথাটা বলে জল চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল, অন্তু বললঃ
আই লাভ ইউ!!
জলঃ I love you too......কথাটা বলেই সাথে সাথে বের হয়ে গেলো।


অন্তুর মনে হলো এতোক্ষনে হয়তো ওর প্রাণ টা সে ফিরে পেয়েছে কারন জল কে ছাড়া থাকা এখন যে ওর জন্যেও অসম্ভব!!!

No comments:

Post a Comment