Tuesday, June 23, 2020

"অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা "

১ম পর্ব


একঃ

দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার, আনুমানিক দুপুর ২ টা বাজবে। অন্তু ঘরে ই ছিল। সম্ভবত সাইকোলজি বইটি নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিল হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল।


দরজা খুলতেই ঘরে প্রবেশ করল একদল তরুনি! অন্তু এদের কাউকেই চিনে না, আর আগে কখনো দেখেও নি তাই অনেকটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করল " কাকে চাই"?

৫ জন মেয়ের মাঝে অপেকাকৃত খাট মেয়েটা বলল " ভাইয়া আমরা আপনার কাছে পড়তে চাই"........... এতোক্ষন অন্ত একটু বিচলিত ছিল, পড়ার কথায় স্বাভাবিক হলো কেনোনা দিনের বেশি ভাগ সময় টা ওর টিউশন করেই কাটে।

অন্তু সবাই কে ভিতরে নিয়ে বসালো। ৫ জনের মাঝে একটি মেয়ে ছিল একদম ই ব্যতিক্রম। অন্য যে কোন মেয়েদের চেয়ে একটু আলাদাই মনে হলো মেয়েটা কে ওর। মেয়েটা বোরকা পড়া ছিল, চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া, মায়াবী চোখের চাহনিতে কেমন যেন বিব্রতবোধ করল অন্তু। সবাই কে বসতে বলে অন্তু ভিতর রুমে গেল ফ্রেস হতে।


একটু পর যখন ও পুনরায় আসলো, সবাই বসে আছে, সেই মেয়েটা দাড়িয়ে ছিল পাশে। অন্তু মনে মনে ভাবলো " যেই মোটা, না বসা ই ভাল, আমার খাট ভাংতে পারে"!! কিন্তু মুখে স্বাভাবিক একটা হাসি এনে বলল- সবাই বসছে, তুমিও বসো? মেয়েটা মুখে কোন কথা বলল না, চুপ করে বসে পড়ল। মেয়েটা,বসতেই খাট টা ক্রাক করে একটা শব্দ করে উঠেল, সাথে সাথে সবাই হেসে উঠল।

অন্তু একে একে উদের নাম জিজ্ঞেস করতে লাগল। খাটো মেয়েটি একটু বেশি ই চঞ্চল।নাম নন্দিনি, হিন্দু। তারপর ফারজানা,জান্নাত,নিতু,রিতা........এভাবে যখন নন্দিনি পরিচয় করাতে করাতে সেই মেয়েটার দিকে ফিরল, নন্দিনি কিছু বলার আগেই বলল-আমার নাম "জল"............

দুইঃ

মেয়েগুলোকে প্রথমেই অন্তুর মনে হয়েছিল প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি ই চঞ্চল, আর একটু বেশি বেখেয়ালি, উগ্র স্বভাবের। ওর ধারনা ই ঠিক হলো। আজকে ও অন্য ২ দিনের মতো ই অন্তু পড়াচ্ছিল। অন্তু সারাধনত মেয়ে ছেলে আলাদা পড়ায় কিন্তু এই ব্যাচ টা একসাথে পড়াবে ঠিক করল। কিন্তু একসাথে পড়ানোর সমস্যা টা কিছুক্ষন পর ই ও টের পেলো.......জান্নাত হঠাৎ করেই বেকে বসলো পাশে বসা আহমেদ ছেলেটার সাথে। এক কথায়, দু কথায় সেটা রূপ নিলো ঝগড়ায়। অন্তুর জিবনে এতোটা অবাক ও কোন দিন ই হয় নি, কারন টা স্টুডেন্ট দের ঝগড়ার জন্যে নয়, কারন হচ্ছে ওর সামনাসামনি বসা জল মেয়েটা......অন্তু মেয়েদের ঝগড়া থামাতেই যাচ্ছিল কিন্তু ওর দিকে তাকিয়ে জল মেয়ে টা হঠাৎ করেই I love you বলে চিতকার করে উঠল!!

সবাই ঝগড়া থামিয়ে চুপসে গেলো, একে অপরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে..... অন্তু প্রথমে ভাবলো ভুল শুনেছে, তাই জিজ্ঞেস করল--এক্সকিউস মি? আমি যদি ভুল করে না থাকি আপনি কিছু একটা বলছেন??
জল কোন রকম দ্বিধাবোধ না করে পুনরায় বলল-- হ্যা বলেছি, Do you love me!!

অন্তু এবার শুধু অবাক ই নয় সাথে সাথে বিরক্ত ও হলো। চেহারাতে বিরক্তি নিয়ে ই বলল--
এটা পড়ার জায়গা, প্রেমশালা নয় যে আপনি প্রেম নিবেদন করতে বসবেন!

অন্তুর কথা জলের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পেরেছিল বলে মনে হয় না কেননা জল বাকি সময়টা পড়ার দিকে মনোযোগী না হয়ে ফেল ফেল করে অন্তুর দিকে তাকিয়ে রইল। ব্যাপারটা অন্যদের চোখে যেমন তিক্ত লাগল, জলের ততোটাই ভাল লাগল।

জান্নাত কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললঃ স্যার, আমরা এখানে পড়তে আসছি, কারো যদি প্রেম করার খায়েশ থাকে ওকে বলবেন আলাদা পড়তে, কথাটা বলেই ব্যাগ নিয়ে সোজা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো!
কেউ কোন জবাব দেওয়ার আগেই জল বললঃ আশ্চর্য!! আমি কি বলব না বলব তা কি ওর কাছে শিখতে হবে! আমি আমার মনের কথাটা বলছি, কার ভালো লাগলো বা না লাগলো এটা দেখা আমার বিষয় নয়!
অন্তু কি বলবে ভেবে পেলো না তাই সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল-- আগামীকাল থেকে ছেলে মেয়ে আলাদা পড়বেন, আর যার যার প্রেম করার ইচ্ছে আছে তারা দয়া করে আর,আমার বাসায় আসবেন না। কথা বলে অন্তু ভিতরে চলে গেলো। সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল, শুধু জল মাথা নিচু করে গান গাইতে থাকলো.....

To be continue.......... 

No comments:

Post a Comment