অন্যদিনের মতো ই অন্তু সবাইকে পড়াচ্ছিল। জল অন্তুর দিকে একটা খাতা বাড়িয়ে দিতে বললঃ স্যার, একটু দেখেন তো, অংকটা হয়েছে কিনা?
অন্তু জলের হাত থেকে খাতাটা নিয়ে হা হয়ে গেলো!
সারা খাতাতে I love you লিখা ছাড়া আর কিছু লিখা নেই! অন্তু রাগে ফেটে পড়ল, কিছু একটা বলতে যাবে, জলের দিকে তাকাতেই জল ওকে চোখ টিপ দিলো!
অন্তু মনে মনে ভাবল ঃ এই মেয়ে নিশচিত মাথায় problem আছে, তা না হলে এতো মানুষের সামনে কেউ এমন করে নাকি! কিন্তু কেন জানি আজকে মুখে কিছু বলতে পারল না, কারন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ওর মন কেমন জানি শান্ত হয়ে গেল, খেয়াল করল রাগটাও আগের মতো নেই জলের উপর! তাহলে কি ও জল কে ভালো বাসতে শুরু করেছে!
না নিজের মন কে নিজেই শান্ত করল।এটা কি করে হয়........ও ত আমার ছাত্রী, ওর সাথে এসব আমায় মানায় না। অন্তু ভাবলো আজকেই ঘটনা টা শেষ করতে হবে। তাই আজকে অনেকটা আগেই সবাই কে ছুটি দিয়ে দিলো। শুধু নন্দিনি, জান্নাত আর জল কে বলল থাকতে।
অন্তুর কথাতে জলের ভিতর ভয় কাজ করতে লাগলো......... জল মনে মনে ভাবছেঃ হয়ত আজকে ওর খবর আছে, আবার ভাবলো, কিসের ভয়, যদি কিছু বলে এক ঘুসি দিয়ে পালিয়ে যাবও!
জল সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে খেয়াল ই করেনি কখন সবাই চলে গেছে, আর রুমে শুধু অন্তু আর জল ই দাড়িঁয়ে আছে!
এবার সত্যিই জলের ভয় করতে লাগল! ভয়টা অন্তু কিছু বলবে এটার নয়, ভয়টা হচ্ছে জীবনের প্রথম কোন ছেলের সামনে একা দাড়িয়েছে, যদি কিছু করে বসে! যা! কি সব ভাবছি আমি! হঠাৎ ই যেনো নিজেকে নিজে প্রস্তুত করল অপেক্ষাকৃত অপ্রত্যাশিত কোন ঘটনার জন্য! জলের মনোভাব বুঝতে অসুবিধা হলো না অন্তুর। তাই অনেকটা ই স্বাভাবিক কন্ঠ করার চেষ্টা করে বলতে লাগলো ঃ দেখো, আমি কোন ভনিতা করতে চাই না, আমি মাস্টার্স এ পড়ি, আর তুমি পড় মাত্র ১০ম শ্রেণীতে, তোমার আমার মাঝে বিশাল ব্যবধান, আর তারচেয়ে বড় কথা হলো, তুমি আমার ছাত্রী, সমাজের চোখে এটা একদম ই বেমানান! আমি তোমার সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারবোনা, আশা করি তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছ?
অন্তু কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে গেলো, সে একবার ও কথাগুলো বলার সময় জলের চেহারার দিকে তাকায় নি, তাকালে হয়ত দেখতে পেতো ওর দুচোখ দিয়ে পানি পড়ে গাল ভিজে গেছে..........জল অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করল কিন্তু পারছেনা, বুক টা কেন জানি কান্নায় ফেটে পড়তে চাইছে! তাই মুখে কিছু না বলে বই গুছাতে লাগলো, ভেতর রুমে নন্দিনি, জান্নাত বসে ছিল। অন্তু যখন ভিতরে ঢুকলো নন্দিনি বললঃ
স্যার, আপনি কাজটা ঠিক করেন নি, জল আপনাকে অনেক ভালোবাসে! ও আপনাকে প্রথম দেখেই বলেছিল আপনার সাথে প্রেম করবে.........আপনার কথাগুলো আমরা শুনেছি, হয়তোবা আপনি জলের চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে পাবেন কিন্তু ওর মতো এতো ভালো আর পবিত্র কাউকে পাবেন না। অন্তু কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু জল কান্নাভেজা কন্ঠে বললঃ এই তোরা বাসায় যাবি? আমি গেলাম.......বলেই দরজাটা খুব জোড়ে ধাক্কা দিলো! জান্নাত বললঃ এক মিনিট দাড়াঁ! আমার একটা কথা আছে স্যারের সাথে...........জল দাড়ালো না, সে দরজাটা খুব জোড়ে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেলো, দরজার ধাক্কার শব্দটা এতোটাই প্রকট হলো যে, পাশের রুমের দরজা খুলে এক প্রতিবেশি চোখ দুটি বড় বড় করে তাকিয়ে রইল!
জান্নাত বললঃ স্যার, ও এমন ই, অনেক রাগি কিন্তু মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো! ও আপনাকে হয়তোবা অল্প কিছু দিন ধরে চিনে কিন্তু এই অল্প কয়েক দিনেই দিন রাত শুধু আপনার কথাই বলে, আমাদের সাথে ওর পরিচয় ৫ বছর ধরে, আপনি বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, এই ৫ বছরে যে কখনো কোন ছেলের নাম মুখে আনেনি, আর সেই মেয়ে নিজে আপনাকে প্রস্তাব দিয়েছে, দয়া করে একটু ভাববেন..........এটা বলে দু জন বেরিয়ে গেলো। অন্তুর মনে হচ্ছিল কোন মুভির দৃশ্য দেখছিল এতোক্ষণ! সে নিজের অবাক হয়ে তাকিয়েই রইল ওদের যাওয়ার পথে...............
No comments:
Post a Comment