Saturday, Marc
জলের বাসায় সেদিন সন্ধ্যায় ঃ
জলের মা হেনা বেগম তরকারি কুটছিলেন এমন সময় জল রুমে ঢুকলো। ঢুকেই সোজা ভিতরের রুমে দরজা লাগিয়ে দিলো। হেনা বেগম খুব রাগী স্বভাবের। মাগরিবের সময় একে বাইরে থেকে এসেছে তার উপর হাত মুখ না ধুয়ে রুমের দরজা লাগানো তে হেনা বেগম রেগে দরজায় গিয়ে খুব জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে লাগলেন!
হেনা বেগমঃ কিরে তুই পড়তে যাস, নাকি ঘুরতে যাস, যে এতোই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিস! দরজা খুলে হাত মুখ ধুয়ে বাবুনি কে কোলে নিয়ে পিটার খাওয়া। তাড়াতাড়ি কর, না হলে আজ বুঝবি.......
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে হেনা বেগম রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো কিন্তু জল দরজা খুললো না। ওর কেন জানি কান্না পাচ্ছিল। মন সায় দিচ্ছিল না, তবু কেন ও অন্তু কে এতো অপমান করল বুঝে উঠতে পারছেনা! সে বোরকা খুলে ফ্যানের রেগুলেটর টা ফুল বাড়িয়ে দিল। তবু শরির আর গাল ভিজে যাচ্ছে ঘামে.....
অস্থির লাগছে সব কিছু! মনে মনে বারবার কেন অন্তুর নাম আসছে! আমি ত ওর সাথে প্রেম করিনি! আমি শুধু মজা করেছি আর আমার অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি! তবে কেন বারবার ওর মুখ ওর হাসি ভেসে উঠছে মনের ভেতরে!
জল ঘরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত বারবার পায়চারী করতে লাগলো....... দাঁত দিয়ে নখ কাটা ওর স্বভাব, যখন বেশি চিন্তায় পড়ে যায় তখন জল এমনটা করে। তাই এখনো না চাইতেও আংগুল টা মুখের ভিতর ই রয়ে গেছে....
****অন্তু বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো কিন্তু অস্থিরতা কমাতে পারলো না। সে হাত জোড় করে মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো - আল্লাহ তুমি জলকে প্লিজ আমার কাছে ফিরিয়ে দাও! আমি ওকে আর কখনো কষ্ট দিবো না, ওকে ভুলেও আর স্পর্শ করবো না, তুমি ওকে প্লিজ ফিরিয়ে দাও! কথাগুলো বলতে বলতে কন্ঠ ভারী হয়ে উঠল কান্নায়। এমন সময় তানহা ঘরে ঢুকলো।
তানহা বাতি জ্বালিয়ে বললঃ দাদা,এই মাগরিবের সময় তুমি বাতি অফ করে কি করতাছ?অন্তুকে ছোটবেলা থেকেই তানহা দাদা ডাকে, ভাইয়া ডাকতে ওর খারাপ লাগে। অন্তু খেয়াল করে নি তানহা কখন এসেছে তাই চোখের কোণের পানি মুছতে পারেনি, তানহা ব্যাপার টা লক্ষ্য করে বললঃ তুমি কান্না করতাছ কার জন্যে শুনি? ওই মোটি তোমাকে কি বলে অপমান করছে? আমাকে বলো, আমি ওর বারোটা বাজিয়ে দিয়ে আসি!
অন্তু তাড়াহুড়ো করে চোখের পানি মুছে বললঃ বেশি বুঝবি না, ও কিছু বলে নি, কিন্তু কেন জানি আজকে কান্না পাচ্ছে! তানহা বুঝেও না বুঝার ভান করে বললঃ কিছু না বললেই ভালো, তা না হলে আমি আবার ভাইলেন হয়ে গেলে মোটির সাইলেন হতে সময় লাগবে, কথাটা বলে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, অর্ধেক বের হবার পর আবার আসলো, মুখে একটা হাসি নিয়ে বললঃ দাদা, প্রেম করিস না, কষ্ট সহ্য করতে পারবিনা! অন্তু একটু চোখ বড় বড় করে তাকাতে ই তানহা টিভির রুমে চলে গেলো। তানহা,চলে যাবার পর অন্তুর ভেতর টা আরো খালি খালি লাগছিল! ও নিজেকে নিজে বুঝাতে ই পারছে না, মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে যে ওর সাথে কেউ এমন টা করতে পারে।
*** হেনা বেগম ঘরে দরজা লাগানো দেখেই বুঝলেন ছোট মেয়েকে এখনো পিটার খাওয়ানো হয়নি জলের। তাই হাতে মাঝারি সাইজের একটা বেত এক হাতে নিয়ে অন্য হাত দিয়ে দরজায় গিয়ে খুব জোড়ে থাপ্পড় দিতে লাগলো ঃ
জল!! তুই ভেতরে কি করছিস শুনি? দরজা খোল যদি ভালো চাস!
মায়ের কন্ঠ শুনে জিদ টা আরো বেড়ে গেলো ওর। সে দরজাটা জোড়েই খুলল।
জলঃ কি সমস্যা তোমার? একটু বিশ্রাম ও নিতে পারবো না তোমার জন্যে?
হেনা বেগম জলের কথার কোন জবাব না দিয়ে সোজা গিয়ে ওর স্কুল ব্যাগ টা খুলে সব চেক করতে লাগলো। জল অবাক হয়ে ভ্রু- কুচকে মায়ের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল, কিছু একটা বলতে যাচ্চিল কিন্তু মায়ের হাতের বেতের দিকে তাকিয়ে মুখে আর কিছু বলার সাহস হলো না।
মা বই চেক করছে হঠাৎ বাহিরের দরজায় কে যেনো নক করল। জল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সন্ধ্যা ৭. ৩০ বাজে! তারমানে বাবা আসছে। সে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল। বকুম হোসেন হাতের বাজারের ব্যাগ টা জলের হাতে দিয়ে বললঃ তোর মা কোথায়? জল নিচের ঠোঁট উপরের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে বললঃ তোমার বৌ আমার পিছে লাগছে কেন? গোয়েন্দা সংস্থায় ভর্তি করে দাও নিয়ে! আমার স্কুল ব্যাগে কি আছে যে এতো চেক করা লাগবে?
বকুল হোসেন হেসে বললঃ কই গেলা তুমি? মেয়ে বড় হচ্ছে, ব্যাগে ত কত কিছুই থাকতে পারে, কেন না বলে খুল তুমি?
হেনা বেগম চোখ গরম করে বললঃ বড় হচ্ছে দেখেই চেক করি। এটা বলে উনি জলের হাত থেকে বাজারের ব্যাগ টা টান দিয়ে নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো।